সেই পবিত্রতার পন্থা হলো হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন আদর্শ। এ পবিত্রতা অর্জনের পন্থা সাবান নয়। নববী আদর্শ হলো এ পবিত্রতার পন্থা। قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّهَا وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسْهَا যে লোক নিজেকে পবিত্র করল, সে সফল হলো। আর যে নিজেকে কলুষিত করল, সে বিফল হলো। (সূরা আশ-শামস ০৯, ১০) তো এ পবিত্রতার জন্য সাবানের প্রয়োজন নেই, পানির প্রয়োজন নেই। এর জন্য প্রয়োজন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র জীবন। যার ভেতরও পবিত্র, বাহিরও পবিত্র। পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উম্মে সুলাইমের ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। গরমের সময় ছিল। পবিত্র শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে নীচে পড়ছিল। উম্মে সুলাইম চুপিচুপি এসে নবীজীর ঘামের ফোঁটাগুলো শিশিতে ভরলেন। শিশি নীচে ধরে রাখলেন আর ঘামের ফোঁটাগুলো তাতে পড়তে থাকল, এভাবে অনেকখানি ঘাম সঞ্চিত হয়ে গেল।
হঠাৎ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলেন, উম্মে সুলাইম বসে বসে তাঁর ঘামগুলো শিশিতে ভরছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কি করছ তুমি? উম্মে সুলাইম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার শরীরের ঘামগুলো মেশকের মত সৌরভ ছড়াচ্ছে। আমার ভাইয়েরা! ঘামতো শরীরের বর্জ্য বলে বিবেচিত। সেই ঘাম এত পবিত্র হলো কিভাবে? কি করেই এলো এত সুঘ্রাণ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীরের ঘামের এত সৌরভ ছিল, তাহলে তাঁর ভেতরটা কেমন পবিত্র হবে? যার বাহির এত আলোকময়, তার ভেতর কত আলোকিত? তো ভাই! আমরা যদি এরকম পবিত্র মানুষটির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে চলি।
তাঁর মহান আদর্শ অনুসরণ করি, তাহলে আমিও পবিত্র হয়ে যাব। আরবের মানুষেরা হাতে গড়া মূর্তির পূজা করে নিজেদের চরমভাবে কলুষিত করে ফেলেছিল। সেই কলুষিত মানুষগুলো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ অনুসরণ করে ইসলাম গ্রহণ করে, তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়ে জগতের শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হয়েছিল। মক্কার কুরাইশরা, মদীনার মানুষগুলো, যারা কাল পর্যন্ত পাথরের তৈরী মূর্তির পূজা করতো, তিনশত ষাট দেবতার পূজা করত। এই মানুষগুলো যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে হাত দিল। যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিজেদের নবী হিসেবে মেনে নিল। তখন আল্লাহ্ পাক তাদেরকে দুনিয়াতে সম্মানিত করলেন, আখেরাতেও সম্মানিত করলেন।৪৮ পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয় তো ভাই ও বোনেরা! মৃত্যুর পর যে জীবন শুরু হবে সেটিই হলো প্রকৃত জীবন। সে জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আর তার প্রস্তুতির জন্য বনে জঙ্গলে যেতে হবে না।
এই শহরে গ্রামে অবস্থান করেই কাজটি সম্পন্ন হতে পারে। কাজটা হলো আল্লাহ তায়ালাকে রাজি করা। এটি দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনের প্রস্তুতি। আল্লাহকে রাজি করাতে না পারলে দুনিয়াও গড়বে না, আখেরাতও গড়বে না। দুনিয়ায় আমরা ক্ষমতাবানদের সন্তুষ্ট রাখি, কারণ সে অসন্তুষ্ট হলে আমার বিপদ হতে পারে। তাই তাদের জন্য কত তোষামোদ। তাদের মনোতুষ্টির জন্য আমার কি ব্যস্ততা। আর জমিন ও আসমানের মালিককে সন্তুষ্ট করতে আমাদের কি ফিকির আছে? আর জমিন ও আসমানের বাদশাকে অসন্তুষ্ট করে আমরা কাকে খুশি করছি? আরে ভাই! এ হৃদয়তো আল্লাহর জন্য। এ হৃদয়ে শুধু আল্লাহর ভালবাসা থাকবে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসা থাকবে। হে, আপনার ইচ্ছা হলে এখানে সমগ্র বিশ্বকে বসিয়ে নিন, আমার রবের কসম। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সাক্ষী আছেন। সমগ্র জগতের সৌন্দর্য, ঐশ্বর্য ও বিনোদনের উপকরণ জমা করেও আপনি শান্তি পাবেন না। যদি হৃদয়ে আল্লাহর ভালবাসা না থাকে। সমগ্র জগতের সব ঐশ্বর্য ও যদি আপনার হাতে এসে যায়। আর সেখানে আল্লাহ না থাকেন, তবে এ আত্মা শান্তির ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে। এ শরীর অস্থির হয়ে থাকবে। দুনিয়ার কোন জৌলুস, কোন জমকালো আসর, কোনো সুরম্য অট্টালিকা, লাখো রূপময় চেহারা এ অন্তরকে শীতলতা দিতে পারবে না। অশান্তি বাড়তেই থাকবে। এর একমাত্র চিকিৎসা হলো, আল্লাহ তায়ালাকে ভালবাসা। প্রিয় নবী (সঃ) এর আদর্শমত জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।