খাগড়াছড়িতে মহিষের শিং দিয়ে তৈরি হচ্ছে গহনা - বাংলা হাদিস

খাগড়াছড়িতে মহিষের শিং দিয়ে তৈরি হচ্ছে গহনা

খাগড়াছড়িতে মহিষের শিং থেকে বানানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গহনা। পাহাড়ি নারীদের কাছে এসব গহনা ব্যাপক কদর রয়েছে। হস্ত চালিত যন্ত্রে বানানো হচ্ছে এ সব বাহারি গহনা। তবে মহিষের শিং সংকটের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্প।

নন্দেজশ্বর কারবারি পাড়া। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ৪নং ইউনিয়নের একটি পুরাতন গ্রাম। এই গ্রামে প্রায় অর্ধশত বছর আগে থেকে হাতির দাঁত থেকে নারীদের হাতের বালা, কানের দুল, আংটি, নেকলেসসহ নানা ধরনের অলংকার বানানো হতো। কালের বিবর্তনে হাতির দাঁত দুর্লভ হওয়ার কারণে এখন এই গ্রামে মহিষের শিং থেকে এই অলংকারগুলো বানানো হয়।

 

সনাতনী পদ্ধতিতে শিং থেকে হস্তচালিত কাঠের যন্ত্র দিয়ে তৈরি করা হয় হাতের চুড়ি, আংটি, কানের দুল ও গলার চন্দ্রহার। কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে সংগ্রহ করা হয় মহিষের বড় শিং। এসব শিং কেটে বানানো হয় গহনা। মহিষের শিংয়ের গহনা পাহাড়ির ঐতিহ্যের ধারক। নারীদের কাছে এসব গহনার কদর বেশি।
 
 
তবে এই অলংকারগুলো তারা কোনো বাজারে গিয়ে বিক্রি করেন না। কেউ অর্ডার দিলে তারা তা বানিয়ে দেন। প্রতি জোড়া হাতের বালা ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি করেন। একটি আংটি ও কানের দুল ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকায় বিক্রি করা হয়।
এই গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ পূর্ণ বিকাশ চাকমা বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এই কাজ করছি। দাদু ও বাবার কাজ থেকে এই কাজটা শিখেছি এবং এই ঐতিহ্যবাহী কাজটা ধরে রেখেছি। যতদিন পারব এই কাজটা করব।
 
বিকাশ চাকমার ছেলে পিন্টু চাকমা। স্নাতক পাশ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। পিন্টু তার বাবা পূর্ণ বিকাশ চাকমার কাছ থেকে কাজ শিখেছেন। ছুটিতে বাড়ি এলে তিনি তার বাবাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন।
 
নন্দেজশ্বর কারবারি পাড়ার কৃষ্ণ রঞ্জন চাকমা বলেন, এই হস্ত শিল্পীরা সম্পূর্ণ হাত দিয়ে এই অলংকার গুলো তৈরি করে। যদি এই অলংকারগুলো বানানোর যন্ত্রপাতি কিনতে পারলে তা দিয়ে আরও ভালো করে গহনা তৈরি করা সম্ভব।
 
এদিকে, এলাকাবাসী এই শিল্পকে ব্যাপকভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকার সহযোগিতা করছেন। তারা প্রত্যাশা করেন মহিষের শিং থেকে তৈরিকৃত গহনার ঐতিহ্য আবারো ফিরে আসবে পার্বত্য এ জেলায়। একই পাড়ার রিপন জ্যোতি চাকমা, দিপ্তী লিকা চাকমা ও মিসেল চাকমা বলেন, এই অলংকার বানিয়ে সংসার চালাচ্ছি। তবে এ কাজের জন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার। এই পাড়ায় ৬টি পরিবার এই অলংকার তৈরি করে সংসার চালায়।
 
অনেকে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন এসব গহনা কিনতে । বিশেষত গ্রামের নারীরা এ গহনার মূল ক্রেতা। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে গহনা কিনতে আসা স্কুল শিক্ষক বিজয়া খীসা জানান, গ্রামের নারীদের কাছে শুনে দেখতে এসেছি। এ শিংয়ের গহনা আমার পছন্দ। এখানে এসে এক জোড়া হাতের চুড়ি ও কানের দুল অর্ডার করেছি। দামও সাশ্রয়ী। এসব গহনা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। শিং থেকে প্রস্তুতকৃত গহনা চাকমা সম্প্রদায়ের নারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়, ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক।
 
 
তিনি আরও বলেন, মহিষের শিং ও হাতির দাঁতের তৈরি গহনা তরুণী থেকে শুরু করে বয়স্ক নারীরা পড়তে পছন্দ করে । বর্তমানে মহিষের শিং ও হাতির দাঁতের তৈরি গহনা পাওয়া যায় না বললেই চলে। কয়েকজন গহনা শিল্পী আছেন যারা এখনো কষ্ট করে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ।
 
গহনা শিল্পী পূর্ণ বিকাশ চাকমা জানান, ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশায় আছি। চুড়ি, আংটি, কানের দুল, চন্দ্রহারসহ বিভিন্ন গহনা বানানো হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে মহিলারা মহিষের শিংয়ের গহনার অর্ডার দেয়। তবে কাঁচামালের সংকটের কারণে চাহিদামতো গহনা বানাতে পারি না। শিং থেকে গহনা বানানো খুবই কষ্টসাধ্য। ঐতিহ্য সুরক্ষায় বংশ পরম্পরায় এ শিল্প ধরে রেখেছি। একজোড়া চুড়ি বানাতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে কাঁচামাল সংকটের কারণে বিলুপ্তির পথে মহিষের শিংয়ের গহনা।

 

দীঘিনালা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুন উর রশিদ বলেন, মহিষের শিং থেকে যে গহনা তৈরি করে এটা ব্যতিক্রমী ও সুন্দর একটা উদ্যোগ। এটা মানুষ পছন্দ করে। এটি একটি হস্তশিল্প। তারা  যদি কোন সহযোগিতা চায় তা হলে উপজেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হবে। যাতে তারা তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *