মহিলাদের মধ্যে যে দোষগুলো দেখা যায়, তা যে সব নারীদের মাঝে রয়েছে, তেমন কথাও বলছি না, বলছি যে অনেক মহিলা বর্ণিত দোষগুলো হতে মুক্তিপ্রাপ্ত নয়। যেমন বহু মহিলাকে দেখা যায়, তারা ভারী নাশোকর এবং অকৃতজ্ঞ। এদের তৃষ্ণা কোনো কিছুতেই মিটে না; বরং আরোও চাই, আরো চাই, কি দিয়েছ তুমি? অমুক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যে সব গহনা দিয়েছে, তার সামনে এগুলো তো বের করাই চলবে না। লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যাবে। আবার কোনো স্বামী তার স্ত্রীর সব চাহিদা পূরণ করা সত্ত্বেও যদি কখনোও কোনো ব্যাপারে একটু মনোমালিন্য হয়, অমনি স্ত্রী বলে ফেলে যে, আল্লাহ আমাকে এমনি পোড়াকপালিনী করে বানিয়েছিলেন যে, তোমার গৃহে এসে কোনোদিন শান্তি কিংবা সুখের মুখ দেখলাম না, কি দেখে তারা আমাকে এমন দুঃখের মধ্যে ভাসিয়ে দিলেন, তারাই জানেন। নারীদের এমন নাশোকরী একটি মারাত্মক দোষ। এই দোষে দোষীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। বিশেষতঃ স্বামীর প্রতি নাশোকর স্ত্রীদেরকে আল্লহ পাক জাহান্নামের আগুনে কঠোর শাস্তি প্রদান করবেন। গীবত, পরর্চচা এবং পরনিন্দা করা অনেক নারীদের আর একটি দোষ। যখন এরা কয়েকজন একত্রিত হয়, তখন এদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় এ কাজগুলো।
একে অপরের কাছে বলতে থাকে যে, অমুক ব্যক্তির স্বভাব প্রকৃতি ভারী খারাপ, অমুক মহিলা অত্যন্ত বেটে, অমুক বাড়ির মেয়েটিকে বিয়ে দিতে হলে বাপ-মাকে বুঝে নিতে হবে বছরে কত দিন।তার গায়ের রংটি যেমন, নাকটিও চেপ্টা, চোখ দুটিও ছোট ছোট, গলার স্বর পুরুষের মতো। এভাবে আরোও অনেক কিছু অনর্থক কথাবার্তা বলে করে তারা জলসায় সময় কাটায়। নেককার মহিলারা কিন্তু এমন জলসায় শরিকই হয় না; বরং এ জাতীয় কথাবার্তা শুরু হলে তারা সেখান থেকে উঠে চলে যায়। তারা জানে গীবত ব্যভিচার থেকেও গুরুতর অপরাধ। মহিলাদের মাঝে আরেকটি দোষের কাজ প্রায়শ দেখা যায়, তা হলো, অভিশাপ দেয়া ও তিরস্কার করা। কি শত্রু, কি মিত্র, এমনকি আপনজন এবং পরম স্নেহের পাত্র নিজ সন্তান-সন্ততিদেরকে পর্যন্ত সামান্য ব্যাপারে অভিশাপ দিয়ে বসে। অনেকে বলে, সন্তানের প্রতি মাতার অভিশাপ আল্লাহ পাক কবুল করেন না, করলে কোনো সন্তানের আর রেহাই ছিল না। কেন না মাতা তার সন্তানকে কারণে অকারণেই অভিশাপ দিয়ে বসে।
মহিলারা তিরস্কারও করে খুব বেশি। যেসব ব্যাপারে তিরস্কার করা উচিত নয়; বরং একটু বুঝিয়ে বলে দিলেই চলে, সেসব ক্ষেত্রেও তিরস্কার শুরু করে দেয়। এটা নিশ্চয় আল্লাহ পাকের অপ্রিয় ও অপছন্দনীয় কাজ। বিশেষতঃ হাদীস শরীফে আছে, এমন কতগুলো নির্দিষ্ট সময় আছে যখন কাউকে অভিশাপ দিলে আল্লাহ পাকের দরবারে তা কবুল হয়ে যায়। ফলে অভিশাপকারিণী মাতা নিজ পুত্রকে অভিশাপ দিয়ে নিজের পুত্রের জন্যই কেঁদে মরতে হয়। কোনো কোনো মহিলার মধ্যে হিংসা ও পরশ্রীকাতরতার প্রাবল্য দেখা যায়। এটা তাদের এক বিশেষ ব্যাধি সদৃশ। ছোট-খাটো বা সাধারণ ব্যাপারেই এরা অন্যের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে। দেখা যায়, কোনো কোনো রমণী নিজের চেয়ে সুন্দরী রমণী দেখলে, তার প্রতি হিংসায় জ্বলতে থাকে। এমনও দেখা যায় কেউ অপরকে নিজের তুলনায় ভালো গহনা ও জামা কাপড় পড়তে দেখলেও হিংসায় জ্বলে। এ কারণে স্বপত্নীদের মাঝে পরস্পরের ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হিংসা-দ্বেষ ভীষণ খারাপ জিনিস। আগুন যেমন কাঠকে পুড়ে ফেলে, হিংসাও তেমনি নেক আমলকে পুড়ে শেষ করে ফেলে। মহিলাদের আর একটি দোষ হলো, তাদের ধৈর্য খুবই কম। অল্পেই তারা অধৈর্য হয়ে পড়ে। অথচ আল্লাহ পাক বলেন, “ইন্নাল্লাহা মাআছ ছাবেরীন” অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।মহিলাদের অধিক লোভ-লালসাও একটি দোষণীয় কাজ। কোনো কিছু দেখলেই তা পছন্দ হয়ে যায় ও তা সংগ্রহের জন্য লোভ জাগে। পছন্দমতো গহনা-কাপড়ের জন্য লালায়িত প্রায় অধিকাংশ মহিলা। খুব বেশি মূল্যের গহনা-কাপড় বা বিলাস দ্রব্য স্বামীর পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব কিনা তা তারা ভেবে দেখে না। সুতরাং এ নিয়ে স্বামীর নিকট আবদার করবে যে, ওগুলো তাকে কিনে দিতে হবে। যার ফলে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক দূর হয়ে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয় এবং সুখের সংসারে দারুণ অশান্তি দেখা দেয়। মিথ্যে কসমের অভ্যাসও নারীদের একটি চরম দোষ। আপন কি পর। এমনকি স্বামীর নিকটও তারা কথায় কথায় মিথ্যা কসম করে তাদের কথা বা দাবির সত্যতা প্রমাণ করতে চায়। তারা বুঝে না যে, এভাবে সব ব্যাপারে অযথা কসম করে নিজেরাই নিজেদের দাবিকে হালকা করে ফেলে।
কসম করলেই লোক তাকে বিশ্বাস করে না। তারপর কসম করার পরে যদি স্বামীর নিকট স্ত্রীর কোনো কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে তো সারা জীবনে কোনোদিনই আর সে স্বামীর কাছে আস্থাভাজন হতে পারবে না। এটা স্ত্রীর জন্য পারিবারিক জীবনে বড়ই দুঃসহ ব্যাপার। এই ধরণের অভ্যাস যাদের আছে তাদের এগুলো পরিবর্তন করা উচিত। নারীদের আর এক দোষ, অহেতুক বেশি কথা বলা ও বৃথা ঝগড়া- বিবাদ করা। অনেকেই সারাদিন কারণে অকারণে বক বক করতে থাকে আর সাধারণ ব্যাপার নিয়েই অন্যের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই ঝগড়া তাদের স্বামী বা অন্য পুরুষদের মধ্যে গড়াতে দেখা যায়। ফলে নারীদের সামান্য বিষয়টিও একসময় ব্যাপক বিপর্যয় সৃস্টি করে। কোনো দুঃখ বা শোকের ঘটনায় নারীগণ অধৈর্য হয়ে চীৎকার করে বিলাপ বা ক্রন্দন শুরু করে পাড়ার লোক জড়ো করে ফেলে। এমন কি বুকে থাপ্পর মেরে, মাথায় আঘাত করে ও যমিনে আছাড় খেয়ে এমন অবস্থা ঘটায় যা কোনো পর্দানশীন, নেককার মহিলার কাজ নয়। একাজ আল্লাহ ও রাসূলের কাছে খুবই অপছন্দনীয় কাজ। শোক প্রকাশ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) যে নির্দেশ দিয়েছেন তা হলো, নীরবে অশ্রু বর্ষণ করা ও মনে মনে ক্রন্দন করা। এভাবে চীৎকার করে ক্রন্দন করা ও আছাড়-পাছাড় খাওয়ায় আমলনামায় বহু গুনাহ লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।