যে কুসংস্কারগুলো মহিলাদের মধ্যে বেশি প্রচলিত

এমন কতগুলো কুরীতি বা খারাপ অভ্যাস এবং কুসংস্কার ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হবে যার ফল খুবই খারাপ। কাজেই সে কুঅভ্যাস এবং কুসংস্কারগুলো দূর করা উচিত। কেননা যারা নেককার নারীরূপে গণ্য হতে চান, তাদের মধ্যে এগুলো থাকা শোভা পায় না। নারীদের একটি স্বভাব হলো, তারা কারোও কোন প্রশ্নের স্পষ্ট করে জবাব না দিয়ে এমনভাবে জবাব দেয় যে, প্রশ্নকারী কিছুই বুঝতে পারে না। এরূপ অস্পষ্ট জবাব দেয়া ঠিক নয়। নারীদের কোথাও যাওয়ার জন্য রওয়ানা হওয়ার সময় অহেতুক ভাবেই এত বেশি দেরী করে যে, সহযাত্রীগণ অধৈর্য হয়ে পড়ে। নারীদের এই গড়িমসির কারণেই গন্তব্যস্থলে যথাসময়ে পৌছানো সম্ভব হয় না। পথিমধ্যেও অসুবিধা দেখা দেয়। এমনকি বিপদাপদও ঘটতে পারে। অথচ সঠিক সময় রওয়ানা হলে এসব ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়া যেত। নচতলার মে মহিলারা কোথাও গেলে এত মাল-সামান সঙ্গে নেয়, যা না হলেও চলে। কিন্তু তারা তা নিবেই। ফল এই হয়, যে সঙ্গী পুরুষটি থাকে ঐ মাল সামানের বোঝা তাকেই বহন করতে হয়।

নিজের খেয়াল বশে অন্যকে এভাবে কষ্ট দেয়া ঠিক নয়। অনেক মহিলার এমন অভাস দেখা যায়, একজন কথা বলছে, তার কথা শেষ করার পূর্বেই আরেকজন কথা বলতে শুরু করে। এতে দুজনের কারো কথাই বুঝা যায় না। নিয়ম হলো, একজন তার কথা শেষ করার পর অন্যজনের কথা শুরু করা। মহিলাদের অনেকেরই এমন অভ্যাস দেখা যায় যে, তারা নিজগৃহে বা বাড়িতে প্রায়শঃ মস্তক অনাবৃত রাখে। এরূপ উচিত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহিলাদের একাজে রহমতের ফিরেশতাগণ অস্বস্তি বোধ করে। কোনো কোনো মহিলা নামায সাধারণত তরক বা কাজা করে না। কিন্তু সামান্য ওজর বা অলসতাবশতঃ দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও বসে বসে নামায আদায় করে। এটা খুবই খারাপ অভ্যাস। কেননা স্মরণ রাখতে হবে যে, কিয়াম বা দাঁড়িয়ে নামায পড়া নামাযের একটি প্রধান রোকন। তা নামায থেকে ছুটে গেলে কোনোক্রমেই নামায শুদ্ধ হবে না।মহিলাদের মধ্যে সচরাচর যে কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসগুলো দেখা যায় তা খুবই মারাত্মক, বিষয়গুলোর কোনোই ভিত্তি নেই। উপরন্তু ঐগুলো অনেকক্ষেত্রে শিরেকের পর্যায় চলে যায়। শুধু মাত্র মহিলার নয় অনেক মূর্খ ও অজ্ঞ পুরুষও ঐ সব ভিত্তিহীন সংস্কারযুক্ত ও অন্ধ বিশ্বাসে জড়িত।

প্রত্যেকেরই উচিত ঐসব ভিত্তিহীন সংস্কার মুক্ত হওয়া এবং নিজেদের ঈমানকে নিখুঁত ও মজবুত করে নেয়া। মনে দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, মানুষের ভালো ও মন্দের একমাত্র মালিক আল্লাহ পাক। তিনি ছাড়া অন্য কেউই মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণের অধিকারী নয়। কয়েকটি কুসংস্কার সমূহের দৃষ্টান্ত পেশ করছি। মহিলারাই বেশি বিশ্বাস করে যে, কেউ কোনো কাজ শুরু করার সময় যদি নিজের হাঁচি আসে বা অন্য কেউ হাঁচি দেয়, তবে তা কুলক্ষণ মনে করে ঐ কাজ থেকে বিরত থাকে। কেননা তাদের ধারণা হয়, কাজের শুরুতে হাঁাঁচি আসা বা হাঁচি দেয়া কাজের ফলাফল নষ্ট করে দেয়। সবাই মনে রাখবেন, এরূপ ধারণা কিন্তু কঠিন গুনাহের কাজ। কোনো কোনো মহিলা এরূপ ধারণা করে, স্ত্রীলোকেরা কোনো জোড়া ফল বা জোড়া কলা ইত্যাদি নিজেরা না খেয়ে বরং যাদের আর সন্তান-সন্ত তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাদেরকে খেতে দেয়। এ ধারণাটি কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল, অধিকন্তু শিরেকী আকীদা। নারী-পুরুষ প্রায় সবারই এরূপ একটি ধারণা রয়েছে যে, কোথাও যাত্রাকালে বা যাত্রা করে পথিমধ্যে খালি কলসী দেখলে যাত্রা ভালো হয় না। আর পথ চলার সময় যদি সাপ বা শৃগাল চলমান ব্যক্তির ডানদিক থেকে বামদিকে চলে যায়, তাও একটি বিশেষ কুলক্ষণ। বলা বাহুল্য এটাও মিথ্যা ধারণা। কেউ কেউ তার কথা বলার সময় টিকটিকি ডেকে উঠলে বলে থাকে, “সত্য টিকটিকি”।

ঐ ব্যক্তি ধারণা করে যে, টিকটিকিটি তার কথার সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে, এটা সম্পূর্ণরূপে শরীয়ত বিরোধী ভ্রান্ত ধারণা। এরূপ ধারণায় ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কখনো কখনো দেখা যায়, মোরগ ও মুরগী একটি অপরটির কানের নিকট ঠোঁট নেওয়া দেখে কোনো কোনো মেয়েলোক বলে যে, মোরগ ও মুরগি কথা বলছে- নিশ্চয় বাড়ি মেহমান আসবে।নারীদের আর একটি ধারণা হলো কারো পানাহার করার সময় যদি খাদ্য বা পানীয় নাসিকায় বা তালুতে উঠে যায়, তবে মহিলারা বলে থাকে যে অবশ্যই কেউ তাকে স্মরণ করছে-এটা নিশ্চয়ই একটি ভ্রান্ত ধারণা। এর কোনো সত্যতা নেই। কোনো কোনো মহিলা ধারণা করে যে, নারীদের হাতে নারীত্বের নিদর্শন স্বরূপ চুড়ি বা কোনো এক আঙুলে মেহেদী না থাকলে তার হাতের পানি পান করা মাকরূহ। এ ধারণাটিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যেসব মহিলা এরূপ ধারণা করে যে, তার পীর পরপুরুষ হলেও তার সাথে পর্দার হুকুম নেই। তাই তার সামনে যাওয়া ও তার সেবা-খেদমত করা শরীয়তে সিদ্ধ। এরূপ ধারণাকারী নারীদের এ মুহূর্তে তাওবাহ করা উচিত। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে পরপুরুষ সে পীর বা যেই হোক না কেন সবাই সমান এবং তাদের সাথে দেখা দেয়া জায়েয নেই। অনেক মহিলাই এরূপ ধারণা করে যে, তাদের হাতে যবেহকৃত জীব জন্তুর গোশত ভক্ষণ করা জায়েয নয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং বিসমিল্লাহ বলে মুসলমান পুরুষ বা নারী যে কেউ যবেহ করলেই তা খাওয়া হালাল হবে।দকা বিভিন্ন স্থানে নারীদের মধ্যে এরূপ প্রচলন দেখা যায় যে, তারা প্রসূতি অবস্থায় চল্লিশদিন পর্যন্ত নামায আদায় করাকে নাজায়েয মনে করে। যদিও চল্লিশদিনের বহু পূর্বেই তাদের নেফাসের রক্ত বন্ধ হয়ে গেছে। নেফাসের ঊর্ধ্ব মুদ্দত চল্লিশ দিন। অর্থাৎ চল্লিশদিন পর্যন্ত রক্ত দেখা গেলে নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে।

কিন্তু নেফাসের নিম্মে মুদ্দতের কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। যদি মাত্র দু-একদিনেই রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, তবে সেই দু- একদিন পরেই নামায আদায় শুরু করতে হবে। জায়। আসামীর অজা নারীদের মধ্যে এমনও একটি কুসংস্কার দেখা যায় যে, তারা রাত্রে ঘর ঝাড় দেয়া, রাতে মাথা আঁচড়ানো ইত্যাদি কাজগুলোকে খারাপ মনে করে। আসলে এগুলোতে খারাপ কিছুই নেই, শুধু একটি ভ্রান্ত ধারণা। অধিকাংশ নারীদের মধ্যে এরূপ ধারণা রয়েছে যে, বাড়ির মধ্যে কোনো উঁচু স্থান বা বৃক্ষ শাখায় বসে কাক ডাকলে কোনো বিপদ ঘটতে পারে। এরূপ ধারণা গুনাহের কারণ।যে নারীগণ সংস্কার বশে স্বামীর আহার করার পূর্বে নিজের আহার করাকে খারাপ মনে করে, সে নেহায়েত ভুল ধারণায় আছে। অবশ্য স্বামীর আদব রক্ষা করা ভিন্ন কথা কিন্তু যদি স্বামীর আহার করার পূর্বে নিজের আহার করাকে কোনো অশুভ লক্ষণ মনে করা হয়, তবে তা অবশ্যই ভুল ধারণা। আমাদের সমাজের মহিলাদের মাঝে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষদের মধ্যেও এ ধরনের অসংখ্য অলীক ধারণা ও কুসংস্কার দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর দ্বারা ঈমান হালকা হয়ে যায়। সুতরাং যারা এসব ধারণার বশবর্তী হয়ে ঈমানের ক্ষতি সাধন করছে তাদের প্রতি অনুরোধ কালবিলম্ব না করে এখনই খাঁটি দেলে তাওবাহ করে ঈমান মজবুত করে নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *