তীব্র শীতে কাবু উত্তরের জনপদ। রংপুরে শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস আবহাওয়া অফিসের।
পৌষের শুরু থেকেই শীতের তীব্র বাড়তে থাকে রংপুরে। বর্তমানে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বিভাগের কয়েকটি এলাকার ওপর দিয়ে। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশায় বেড়েছে ভোগান্তি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। হাড় কাঁপানো শীতে মিলছে না কাজ। কমেছে আয়। অনেকে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
নগরীর স্টেশন এলাকার জামিল মিয়া বলেন, ‘অতিরিক্ত ঠান্ডায় খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা। সকালবেলা ফজরের নামাজ পড়তে বের হইলে শীতে কাঁপনি ধরে। খুব কষ্টে আছি বয়স হচ্ছে তো। এজন্য আর ঠান্ডা সহ্য হয় না। শীতে কম্বলও পাই নাই। এজন্য খড়কুটা জোগাড় করে একটু আগুন পোহাচ্ছি।’
নগরীর বেতপট্টি এলাকায় প্রতিদিন কাজের সন্ধানে আসা দিনমজুর কুদ্দুস আলী বলেন, ‘কাজ কর্ম নাই ঠান্ডার কারণে। এখন কোন রকম আশায় আছি যদি কাজ হয়। না হইলে ঘুরি চলে যাবো বাড়ি। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিনযাপন করতেছি। প্রতিদিন বসে থাকলে আমাদের দিনকাল যে কিভাবে যাবে আল্লাহ্ ভাল জানে।’
তবে শীত ঘিরে মৌসুমি পিঠার পসরা নগরজুড়ে তৈরি করেছে ভিন্ন আমেজ। এসময়টাতে বাড়তি আয়ে খুশি পিঠা ব্যবসায়ীরা। নগরীর দর্শনা এলাকার পিঠা ব্যবসায়ী মোকলেস উদ্দিন বলেন, এ সময় প্রতিদিন ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকার পিঠা বিক্রি করি। খুব ভাল বেচা বিক্রি হচ্ছে। আগের ঘাটতিটা এখন তুলতেছি। ভাপা-পিঠা, চিতই পিঠার চাহিদা অনেক বেশি। আশা করি গতবারের চেয়ে এই মৌসুমে ভাল ব্যবসা করতে পারবো।
এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান বলেন, আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা আছে। সেক্ষেত্রে আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে রংপুর অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে মৃদু, মাঝারি বা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার রংপুর জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা ঘণ্টায় ৯৬ শতাংশ।
তবে জেলা প্রশাসন বলছে, অসহায় শীতার্তদের সহায়তায় রয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সাল বলেন, শীতের জন্য আমরা যে কম্বল পেয়েছি তার সংখ্যা হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩৩২ পিচ। শুধুমাত্র সরকারি ভাবেই না আমরা বেসরকারি ভাবেও কম্বল যোগাড় করে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আমরা বিতরণ করছি।
উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে রংপুর বিভাগে তাপমাত্রার পারদ ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ওঠানামা করছে।