প্রিয় ভাই ও বোন! প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক টানা পাঁচঘন্টা আরাফার ময়দানে নিজের উম্মতের জন্য কেঁদেছেন। মরুভূমির উত্তপ্ত বালু। তাবু নেই, ছায়া নেই, উটের পিঠে বসে পাঁচ ঘন্টা একনাগাড়ে দোয়া করেছেন। আমরাতো পাঁচ, দশ মিনিট দোয়া করলেই ক্লান্ত হয়ে যাই। আর আল্লাহর নবী পাঁচটি ঘন্টা দোয়া করেছেন। কখনও কখনও তিনি অস্থির হয়ে উঠের রেকাবে পা রেখে দাঁড়িয়ে যেতেন, আর হাত দুটি পুরোপুরি উপরে উঠে যেত। তিনি অস্থির হয়ে ছটফট করতেন আর বলতেন, আমার উম্মত! আমার উম্মত! হাদীসে আছে, ওফাতের এক সাপ্তাহ আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জানা হয়ে গিয়েছিল যে, বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। সাহাবায়ে কেরামগণ আসছেন, আল্লাহর নবীর মোবারক চেহারা দেখার জন্য। শয্যাশায়ী আল্লাহর নবী। তিনি বললেন, আমি তোমাদের সবাইকে আমার শেষ সালাম জানাচ্ছি। তোমাদের পর যারা আসবে, তাদেরকেও আমার সালাম দিও।
এভাবে যারা তারপরে আসবে তাদেরকেও বলবে তারা যেন তাদের পরে যারা আসবে তাদের কাছে আমার সালাম পৌঁছে দেয়। এভাবে পরবর্তীদের নিকট আমার সালাম পৌঁছে দিও। সুবহানাল্লাহ্। আমরা তখনও আত্মার জগতে ছিলাম, আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাম জানিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের উদ্দেশ্য বললেন, মন চাচ্ছে আমি আমার ভাইদের দেখব। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার ভাই নই কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নানা, তোমরা আমার ভাই নও, তোমরা আমার সাহাবী। আমার ভাই হলো তারা, যারা আমাকে দেখা ব্যতীত কালেমা পাঠ করে মুসলমান হবে।
এক সাহাবী বললেন, ধন্য হোক, সেই ব্যক্তি, যে আপনাকে দেখেছে এবং আপনার উপর ঈমান এনেছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাত বার ধন্য হোক সে, যে আমাকে দেখেনি; কিন্তু তারপরও আমার প্রতি ঈমান এনেছে। কত বড় দুঃখের বিষয় যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতবার মোবারকবাদ দিয়েছেন, কিন্তু তারপরও আমরা তাঁর নাফরমানী করছি। এমন নবীর নাফরমানী তারপরও আমরা করে যাব? কিসের খাতিরে করব? জিহ্বার স্বাদের জন্য? দেহের আরামের জন্য? কানের সুখের জন্য? চোখের আরামের জন্য? দুনিয়ার আরাম আয়েশের জন্য এমন দয়ালু মানুষটির বে-অফায়ী কি আমরা করেই যাব?৪৬ পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয় আমরা কত অন্যায় অবিচার করছি, কিন্তু তারপরও আমাদেরকে জমিন গিলে ফেলছে না কেন?
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দোয়া আমাদেরকে রক্ষা করছে। তাঁর রাত জাগা ছটফটানি আমাদেরকে টিকিয়ে রেখেছে। উম্মতের জন্য কেঁদে কেঁদে তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। উম্মতের মুক্তির চিন্তায় তিনি পেরেশান হয়ে উঠতেন। পেটে পাথর বেঁধেছেন। সারা রাত জেগে ছটফট করতেন। সর্প দংশিত মানুষের মত তড়পাতেন। দয়াল নবীর এ তড়প কি নিজের জন্য ছিল? যার জন্য জান্নাত তৈরী হয়েছে। পরকালে যার হাতে জান্নাতের চাবি থাকবে। যিনি সবার আগে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আল্লাহর সেই নবী প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি নিজের মুক্তির জন্য কেঁদেছেন? না তিনি কেঁদেছেন আমাদের জন্য। আমাদের মত অকৃতজ্ঞ উম্মতের জন্য কেঁদেছেন। আর আমরা কিনা তারই সাথে বেয়াদবী করছি! প্রিয় ভাই ও বোন! আল্লাহর ওয়াস্তে বিবেকের পরিচয় দিন। এভাবে আর কতকাল চলবেন? জীবনের সমাপ্তি ঘটতে পারে যে কোন মুহূর্তে। তারপর সেই মহান মানুষটির মুখোমুখি হতে হবে। কি জবাব দিবেন?