হিজরতের ঘটনা |

🌱সৌদি আরবের মক্কা থেকে: জাবালে সাওর বা গারে সাওর। এই সাওর পর্বতের একটি গুহায় হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মদিনা মোনাওয়ারায় হিজরতের সময় আত্মগোপন করেছিলেন। 🌱এই গুহায় আত্মগোপনের সময়েও নবী করিম (সা.) ছিলেন আল্লাহর সাহায্যের ওপর পূর্ণ আস্থাশীল ও দুশ্চিন্তাহীন। কোরআনে কারিমে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে যে, ‘যদি তোমরা তাকে (নবী মুহাম্মদকে) সাহায্য না করো, তবে মনে রেখো, তাকে কাফেররা (মক্কা থেকে) বহিষ্কার করেছিল। 🌱তিনি ছিলেন দু’জনের একজন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিলেন, তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। 🌱পাহাড় কোন জায়গায় অবস্থিত 🌱সাওর পাহাড়টি মক্কার দক্ষিণে কুদাই মহল্লার অন্তগত বর্তমানে পরিকল্পিত আল হিজরা এলাকায় অবস্থিত। 🌱এই পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র দেখা যায়।   🌱স্থানটি মসজিদে হারাম থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 🌱সাওর পর্বতের উচ্চতা ৪৫৮ মিটার। পর্বতটির মোট আয়তন ১০ বর্গমিটার।

এই পাহাড়ে রসূল আবু বক্করকে নিয়ে কয়দিন ছিলো   এ গুহার মধ্যেই হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মদিনা মোনাওয়ারায় হিজরত করার সময় ৩ দিন আত্মগোপন করেছিলেন। এ গুহার সামনে এবং পেছনে একটি করে প্রবেশ দ্বার রয়েছে। গুহাটির প্রশস্ততা ২ বর্গ মিটার। সাওর পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) আমার কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে গুহায় ছিলাম, আমি মুশরিকদের পদচারণা প্রত্যক্ষ করছিলাম, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের কেউ যদি পা ওঠায় তাহলেই আমাদের দেখে ফেলবে, তিনি বললেন, আমাদের দু’জন সম্পর্কে তোমার কী ধারণা? আমাদের তৃতীয় জন হলেন- আল্লাহ। অর্থাৎ তিনি আমাদের সাহায্যকারী।   তবে এ পর্বতের ফজিলত সম্পর্কে বিশুদ্ধ কোনো হাদিস বা কোনো সাহাবির কোনো মন্তব্য নেই। তার পরও হজপালন করতে আসা মানুষ এ পর্বত দেখার দেখার জন্য উদগ্রীব থাকেন এবং তা দেখতে যান। হাজিদের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় এ পর্বতের নাম থাকবেই। দর্শনার্থীদের অনেকেই সাওর পাহাড়ে দলবেধে ওঠেন, কেউ নিচে থেকেই দেখেন।   অনেকে সাওর পর্বতের যে গুহায় নবী করিম (সা.) লুকিয়েছিলেন, সেখানে উঠে নামাজ পড়েন, দোয়া করেন, গুহায় মনের বাসনা লিখে রাখেন, সেখানকার পাথর ও মাটিকে বরকতময় মনে করে তা নিয়ে আসেন। যদিও এসব কাজের কোনো ভিত্তি ইসলামি শরিয়তে নেই। মসজিদে হারাম সংলগ্ন নবী করিম (সা.)-এর বাড়িটি বর্তমানে লাইব্রেরি। নবী করিম (সা.) হিজরতের সময় নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর করে রাখা বাড়ি হয়ে মদিনার উদ্দেশে রওনা করেন। তিনি মক্কা থেকে যে পথে মদিনার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিলেন সে পথের বর্তমান নাম- হিজরা রোড। সেখানে মিসফালায় হিজরা মসজিদ নামে একটি মসজিদ রয়েছে।

যেভাবে রসূলকে স্বাগতম জানিয়েছিলেন মদিনার মানুষ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের বিষয়টি আগে থেকেই জেনেছিলেন মদিনার আনসার সাহাবিগণ। মহানবী সা. মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার পর থেকে মদিনাবাসী সাহাবিরা প্রতিদিন ফজরের পর শহরের প্রান্তে গিয়ে আল্লাহর রাসূলের জন্য অপেক্ষা করতেন। রৌদ্রতাপ প্রখর ও তীব্র না হওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতেই থাকতেন। তাপপ্রবাহ সহ্যের বাইরে চলে গেলে সবাই নিজ নিজ ঘরে ও কাজে ফিরে যেতেন। নবীজির হিজরতের সময়কালটি ছিল গ্রীষ্ম মৌসুমে। তাই এ সময় রোদের তীব্রতা ছিল প্রচণ্ড। ৫৯ রাসূল সা. যেদিন হিজরতের সফর শেষে মদিনা উপকণ্ঠে উপস্থিত হয়েছিলেন সেদিন অন্যান্য দিনের মতো অপেক্ষা শেষে আনসার সাহাবিদের সবাই যার যার ঘর ও কাজে ফিরে গিয়েছিলেন। এ সময় একজন ইহুদি রাসূল সা.-কে সবার আগে দেখতে পেয়েছিল। সে প্রতিদিন আনসার সাহাবিদের নবীজির জন্য অপেক্ষা করতে দেখতো। তাই আল্লাহর রাসূলকে দেখতে পেয়ে সে সবাইকে নবীজির আগমনী বার্তা সম্পর্কে জানালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *