আমাদের চিন্তার দুর্বলতা প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

আমরা কি ধরে নিয়েছি, দুনিয়ার যিন্দেগীতে আরাম আয়েশই সব! ভাল কাপড়, ভালো ভালো বাড়ি, দামি গাড়ি, ব্যাংকে অঢেল টাকাই আমাদের সব? মহিলারা কি ভেবেছে, ভাল ভাল অলংকার, দামী পোশাক যত হবে, তত বেশি মর্যাদার অধিকারী হবে? আরে এ মর্যাদার স্থায়িত্ব কত দিনের? একদিন তো এ মর্যাদা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। এ দেহকে কবরের পোকা মাকড়ে খেয়ে ফেলবে। এ প্রাপ্তি, এ সাফল্য মর্যাদা ক্ষণিকের, ক্ষণস্থায়ী এ জীবনে দুনিয়াবী এ মর্যাদার কি মূল্য আছে? চিরস্থায়ী সাফল্য ও মর্যাদাতো প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনাদর্শের মধ্যে নিহিত। আমাদের নবী শেষ নবী। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী ও রাসূল। তাঁর উপর নবুওয়ত খতম। তাঁর উপর রেসালাত খতম। তাঁর উপর নেতৃত্ব খতম। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সমস্ত ইজ্জত, শরীয়াত, এ সমস্ত যোগ্যতার সমাপ্তি ঘটে গেছে। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করে দিয়েছেন, এ নবীই শেষ নবী। এ নবীর পর আর কোন নবী আসবে না। কাজেই এখন থেকে দ্বীনের দাওয়াত প্রত্যেকটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব থেকে গাফেল হলে, রাব্বুল আলামীনের নিকট আমাদের জবাব দিতে হবে।

তো ভাই! আমরা দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার রহস্য এর মাঝে নিহিত আছে যে, আমরা আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দির দিকে অগ্রসর হবো। তা এভাবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরিকা পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয় ৪৩ আমাদের পুরুষ, আমাদের মহিলা ও আমাদের সন্তানদের জীবনে চলে আসবে। যে-ই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শকে অনুসরণ করবে, সে-ই আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হবে। একজন মানুষ, চাই পুরুষ হোক, বা নারী হোক, সুরম্য প্রাসাদে বাস করুক, কিংবা জীর্ণ কুটিরে বাস করুক। যেখানেই থাকুক না কেন, যদি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনাদর্শ অবলম্বন করে, তাহলে তার জীবন সফল ও সুখময় হবে। অন্যথায় ধ্বংস ও ব্যর্থতা এবং অশান্তির আগুনে পুড়বে। দেখুন হাবশী বেলাল (রা.) কে। কালো কুশ্রী, দাস ছিল। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুকরণ অনুসরণ করার ফলে তাঁর জীবন সফল হয়ে গেছে। দুনিয়া ও আখেরাতে তাঁর মর্যাদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন কবরগুলো ফেটে যাবে। আমি সকলের আগে বের হব।

আমার ডান দিক থেকে হযরত আবু বকর (রা.) বের হবে, আমার বাম দিক থেকে হযরত ওমর (রা.) বের হবে। আর পায়ের দিক থেকে বের হবে হযরত বেলাল (রা.)। একটি কথা মনে রাখবেন, যে ব্যক্তির কবর যেখানে, কেয়ামতের দিন সেখান থেকেই তাকে উঠানো হবে। যেখানে যার কবর, সেখানেই তার হাশর। কিন্তু হযরত বেলাল (রা.) এর ব্যাপারটা ভিন্ন। তাঁর কবর শামে। তিনি উঠবেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পায়ের দিক থেকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, বেলাল উটেই আযান দিবে। আল্লাহ আকবার, আল্লাহু আকবার। দুনিয়ায় ও মুয়াজ্জিন, আখেরাতেও মুয়াজ্জিন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সব মানুষ হাশরের মাঠের দিকে পায়ে হেটে রওয়ানা হবে। আমি যার বোরাকে চড়ে। আমার সামনে সামনে বেলাল যাবে- একটি লাল উটের পিঠে চড়ে। বলুন তো! হযরত বেলাল এ মর্যাদা কোথায় পেলেন? আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্যের কারণে।

প্রিয় ভাই ও বোন! সোনা রূপার মালিক হওয়ার দ্বারা আমাদের মূল্য নির্ধারণ হবে না। বরং আমাদের মূল্য নির্ধারণ হবে মুহাম্মদী হওয়ার সুবাদে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শকে আমরা যে পরিমাণ গ্রহণ করব। যে যতটুকু অনুসরণ অনুকরণ করব, তার মূল্য ততটুকুই নির্ধারিত হবে। বলুন তো, আজ কত ঘর এমন আছে, যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরিকা জবাই হচ্ছে না? কত পুরুষ এমন আছে, যারা আল্লাহর নবীর সাথে বিদ্রোহ করছে না? কত নারী এমন আছে, যারা সুন্নতে নববীকে নিয়ে মযাক করছে। বলুনতো আমরা কার আনুগত্য করে আল্লাহ ও আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধাচরণ করছি? শয়তানের শিখানো মতবাদ গ্রহণ করে কার বিরুদ্ধাচরণ করছি? যিনি আনুগত্যের যোগ্য ছিলেন, তার বিরুদ্ধাচরণ করছি। আর যার বিরুদ্ধাচারণ করার কথা ছিল, তার অফাদারী করছি। আজ আমাদের না দ্বীন থাকল, না আখেরাত থাকল। বড়ই আফসোসের বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *