কারুনের অবাধ্যতা বনী ইসরাইলের উপর যাকাতের বিধান জারী হলো। শতকরা দশভাগ। বিপুল সম্পদের মালিক কারুন হিসাব করল, তার যাকাত আসে কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু এত টাকা হাত ছাড়া করতে তার মন সায় দিল না। সম্পদের মায়া তাকে যাকাত আদায়ে নিরুৎসাহিত করল। কারুন সিদ্ধান্ত নিল, সে যাকাত তো দিবেই না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে যাকাতের বিধান জারী করার কারণে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আটল। আল্লাহর নবী হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এর বিরুদ্ধে অপরাধ আরোপের পরিকল্পনা ঠিক করল। এক পাপিষ্ঠা মহিলাকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে সম্মত করাল যে, তুমি মুসা আলাইহিস সালাম এর বিরুদ্ধে যিনার অপবাদ দিবে। বলবে মুসা আলাইহিস সালাম আমার সাথে যিনা করেছে। ঈমান যখন থাকে না, তখন মানুষের বিক্রি হতে সময় লাগে না। হাজার হাজার মানুষের সামনে বয়ান করছিলেন আল্লাহর নবী হযরত মুসা আলাইহিস সালাম। সেখানে কারুনও উপস্থিত।
এক পর্যায়ে কারুন দাঁড়িয়ে মুসা আলাইহিস সালাম কে প্রশ্ন করল, হে মুসা! কেউ যদি বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যিনা করে, তাহলে তার শাস্তি কি? হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, তাকে পাথর মেরে মেরে হত্যা করা হবে। কারুন বলল, এ মহিলা কি বলছে শুনুন। কারুন মহিলাকে দাঁড়করালো এবং বলল, তুমি সাক্ষ্য দাও। পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয় মহিলা সাক্ষ্য দিতে দাঁড়াল। কিন্তু আল্লাহর নবীর চেহারায় দৃষ্টি পড়তেই তার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। মহিলা থরথর করে কাঁপতে লাগল। মহিলা বলল, হে আল্লাহর নবী। আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি এমনিতেই একজন পাপিষ্ঠা নারী। তার উপর একজন নবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরোপের দায় নিয়ে মরতে চাইনা। মহিলা সাফ সাফ বলে দিল, আপনার উপর অপরাধ আরোপের জন্য কারুন আমাকে অর্থ দিয়েছে। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন, বললেন, হে আল্লাহ্! তোমার নবীর সঙ্গে এ কেমন ঘটনা ঘটে গেল? আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমি জমিনকে তোমার অনুগত করে দিলাম। তুমি কারুনকে জমিনে ধসিয়ে দাও। মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, হে জমিন, কারুনকে ধরো। সঙ্গে সঙ্গে জমিন কারুনকে ধরে ফেলল এবং কারুন জমিনে ধসে যেতে লাগল।
কারুন বুঝতে পারল সে ধরা পড়ে গেছে, জমিন তাকে গিলে ফেলছে। কারুন বলল, মুসা! আমাকে ক্ষমা করে দাও। কিন্তু মুসা আলাইহিস সালাম জমিনকে বললেন, ওকে ভাল করে ধরো। কারুন আরও ভিতরে ধসে যেতে লাগল। কারুন আবারও ক্ষমা চাইল। মুসা আলাইহিস সালাম বললেন ওকে শক্ত করে ধরো। এভাবে কারুন ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে ধসে যেতে লাগল। যখন কারুন সম্পূর্ণ ধসে গেল, আল্লাহ তায়ালা বললেন, মূসা! তোমার অন্তর এত শক্ত! কারুন বার বার ক্ষমা প্রার্থনা করল, আর তুমি ক্ষমা করলে না? আমি আমার মর্যাদা ও প্রতাপের শপথ করে বলছি, যদি আমার কাছে সে একটি বার ক্ষমা চাইতো, তাহলে আমি মাফ করে দিয়ে তাকে উদ্ধার করতাম। তো ভাই দেখুন, আল্লাহ তায়ালা কারুনের মত অবাধ্য নাফরমানকেও ক্ষমা করতে প্রস্তুত ছিলেন, আর আমরাতো কারুনের চেয়েও অনেক ভাল এবং শেষ নবীর উম্মত। আমাদেরতো সুপারিশকারী আছেন।